৩ বছরেও চালু হয়নি অর্ধকোটি টাকার বায়োমেট্রিক হাজিরাযন্ত্র, মেশিন ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ

আরিফ গাজী :

** শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে ক্লাস ফাঁকির অভিযোগ।
** ১৯০টি বিদ্যালয় থেকে মেশিন বাবদ নেয়া হয়েছে ২২-৩০ হাজার টাকা।
** বিদ্যালয়ের প্রধানরা বলছে অফিসের নির্দেশনায় মেশিন ক্রয় করা হয়েছে।
** শিক্ষা অফিসের দাবি মেশিন ক্রয়ের বিষয়ে কিছুই জানে না তারা।

দুপুর ১২টা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকের কথা জানতে চাইলে সহকারি শিক্ষক জানান, স্যার অফিসের কাজে উপজেলায় আছেন। আমরা আছি, ক্লাস নিতে কোন সমস্যা হয় না। স্যারদের তো অধিকাংশ সময় অফিসের কাজে উপজেলায় থাকতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু মুরাদনগর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান’ই না, প্রতিনিয়ত শিক্ষা অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্লাস ফাঁকি দিচ্ছেন শিক্ষক নেতা ও অধিকাংশ স্কুল প্রধানরা।

এদিকে শিক্ষকরা যেন ক্লাস ফাঁকি দিতে না পারে এ সমস্যা সমাধানের লক্ষে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায় ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরাযন্ত্র। তবে এতেও কোন কাজ হয়নি, সফটওয়্যারের অজুহাত দেখিয়ে ৩ বছরেও চালু করা হয়নি সেই ১৯০টি বায়োমেট্রিক হাজিরাযন্ত্র। বরং উল্টো অভিযোগ উঠেছে সেই মেশিন ক্রয়ে অনিয়ম হওয়ার। প্রতিটি বিদ্যালয়ের স্লিপের ফান্ড থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২২-৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বাজার যাচাই করে মেশিন ক্রয়ের কথা থাকলেও অফিসের নির্দেশনায় একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে মেশিন ক্রয় করেছেন সবাই। এসব মেশিনের বাজার দর জানা নেই শিক্ষকদের। তারা ভয়ে নামও বলছেন না সেই প্রতিষ্ঠানের। ২৫-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে যে ‘iclock9000-G’ মডেলের’ ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটি বিদ্যালয়ে গিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে তার সঠিক বাজারমূল্য আনুষঙ্গিক খরচসহ সাড়ে ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি মেশিন ক্রয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে।

একাধীক সহকারি শিক্ষকরা বলছেন, মেশিন কবেই চালু হইয়া যাইতো আমাদের শিক্ষক নেতারাই চায় না, এটি চালু হউক। কারণ প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষা অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে উপজেলায় রাজনৈতিক লিডারদের সাথে সময় কাটান শিক্ষক নেতারা। মেশিন চালু হইলে তো আর তারা এটা পারবে না।

মুরাদনগর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক নেতাদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তারা জানান, আমাদের অফিসের কাজেই উপজেলায় যাওয়া হয়। এটা আমাদের শিক্ষা অফিসার ও সহকারি শিক্ষা অফিসার সবাই জানে। আর হাজিরা মেশিন মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে এখানে আমাদের প্রতিবাদের কিছু নেই।

বাঙ্গরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, মেশিন আমরা যাচাই-বাছাই করেই ক্রয় করেছি। ২ বছরের সার্ভিস ও প্রশিক্ষণ দেয়াসহ মেশিন ক্রয় করাতে দামটা বেশি পরেছে। করোনার কারণে মেশিন চালু করতে পারিনি আবার সার্ভিসের মেয়াদও চলে গেছে। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না।

মুরাদনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফওজিয়া আকতার বলেন, মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই তবে শুনেছি স্লিপের টাকা থেকে প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে হাজিরা মেশিন স্থাপন করেছে। মেশিনগুলো এখনো কেন চালু করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোম্পানী থেকে এগুলো ক্রয় করা হয়েছে তারা মেশিনের সফটওয়্যার দেয়ার কথা থাকলেও তা এখনো দেয়নি। তবে আমি যতটুকু জানি সিম কার্ডের মাধ্যমে এসব মেশিন থেকে শিক্ষকদের হাজিরা প্রিন্ট করা সম্ভব। এটিও তারা কেন করছেনা তা আমার জানা নেই। অবশ্য শুরুতেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্যার এসব মেশিন ক্রয় করতে মানা করেছিলো।

মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, শুরুতে আমার কাছে এ বিষয়ে একটি প্রজেক্ট চেয়েছিলো আমি তাতে রাজি হইনি। উপজেলায় একটি সিন্ডিকেটের মতো আছে তারা পরবর্তীতে স্লিপের টাকা থেকে এসব মেশিনগুলো কয় করিয়েছে। এখন শুনতেছি মেশিন ক্রয়ের ৩ বছরেও নাকি তা চালু করা হয়নি। আমার যেটা মনে হয় শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করা মেশিন ক্রয়ের মূল লক্ষ্য ছিলোনা, মূল লক্ষ্য ছিলো মেশিনের নামে ওই সিন্ডিকেটের পকেট ভারি করা।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!